সেইদিন রাতে ওই বাসে নারী যাত্রীদের সঙ্গে যা ঘটেছিল
কুষ্টিয়া থেকে ছেড়ে আসা ঈগল পরিবহণের বাসে টাঙ্গাইলের মধুপুরে ডাকাতি ও নারীকে গণধর্ষণের ঘটনার ভয়াবহতার বর্ণনা দিয়েছেন ভুক্তভোগী যাত্রীরা। বাস যাত্রীদের কাছ থেকে জানা যায়, গতকাল মঙ্গলবার কুষ্টিয়া থেকে ঈগল পরিবহনের একটি বাস অন্তত ২৫ জন যাত্রী নিয়ে চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসে। বাসটি বঙ্গবন্ধু সেতু পার হলে যাত্রীবেশী ডাকাতেরা অস্ত্রের মুখে ঘুমন্ত যাত্রীদের হাত-মুখ ও চোখ বেঁধে জিম্মি করে। এর পর যাত্রীদের কাছে থাকা মোবাইল, টাকা, স্বর্ণালংকার লুট করে নেয়। পরে ডাকাত দলের সদস্যেরা গাড়িতে থাকা নারী যাত্রীদের ধর্ষণ করেন।
টানা তিন ঘণ্টা যাত্রীদের ওপর চালানো নির্যাতনের পর টাঙ্গাইলের মধুপুর উপজেলার রক্তিপাড়া নামক স্থানে এসে বাসটির গতি থামিয়ে ডাকাত দল নেমে যায়। মুহূর্তের মধ্যেই চোখ-মুখ ও হাত বাঁধা যাত্রীদের নিয়ে বাসটি রাস্তার পাশের বালুর ঢিবিতে কাত হয়ে পড়ে দুর্ঘটনার শিকার হয়। স্থানীয়রা এগিয়ে এসে তাঁদের উদ্ধার করেন।
কুষ্টিয়া থেকে ছেড়ে আসা বাসটিতে নাটোরের বড়াই গ্রামের বাসিন্দা ফল ব্যবসায়ী হাবিবুর রহমান যাত্রী হন রাত ১০টায়। তিনি নাটোরের তরমুজ চত্বর থেকে বাসে ওঠেন। তিনি আমড়া, কাঁঠাল ও তাল ঢাকায় বিক্রি করার জন্য নিয়ে যাচ্ছিলেন।
ভুক্তভোগী এই যাত্রী বলেন, ‘আমরা বাসে উঠে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। আমাদের বাসটি সিরাজগঞ্জের কাছাকাছি “দিবারাত্রি হোটেলে” রাতের খাবারের জন্য বিরতি দেয়। বাসের অনেকেই ওই হোটেলে খাবার খান। আমিও ওই বাসের সুপারভাইজার রাব্বি ও সহযোগী দুলালের সাথে বসে খাবার খেয়েছি। আগে যে চালক বাস চালাতেন, আজ সেই চালক ছিলেন না। কড্ডার মোড়ে আসার পর গেঞ্জি, শার্ট পরা ১০-১২ জন যাত্রী ওঠেন। তাঁদের প্রত্যেকেরই পিঠে ব্যাগ ছিল। তাঁরা বাসের খালি সিটগুলোতে বসে পড়েন। বাসটি বঙ্গবন্ধু সেতু পার হওয়ার পর যাত্রীবেশে ওঠা এই ডাকাত দলের সদস্যেরা অন্য ঘুমন্ত যাত্রীদের অস্ত্রের মুখে একে একে বেঁধে ফেলে। একই সঙ্গে প্রত্যেক যাত্রীর চোখ ও মুখ বেঁধে জিম্মি করে বাসের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয় তারা। এমনকি শিশুদেরও একই কায়দায় বেঁধে রাখে তারা। পরে সব যাত্রীর কাছ থেকে মোবাইল, টাকা, গয়না লুট করে নেয়। তার পর নারী যাত্রীদের ওপর পাশবিক নির্যাতন চালায়।’
হাবিবুর রহমান বলেন, ‘আমার পাশে বসা নারীকে চার দফায় ধর্ষণ করা হয়েছে বলে আমি অনুধাবন করতে পেরেছি। আমরা অসহায় ছিলাম। হাত, মুখ, চোখ বাঁধা ছিল। কিছুই করতে পারিনি। টানা তিন ঘণ্টা আমরা ওই বাসটিতে জিম্মি ছিলাম। বাসটি কোথা থেকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে, আমরা কিছুই জানি না। দুর্ঘটনায় শিকার হওয়ার পর আমরা জানতে পারি, টাঙ্গাইলের মধুপুরের রক্তিপাড়া এলাকায় আছি।’
জেসমিন আরা নামের এক নারী যাত্রী বলেন, আমার এক সিট পেছনে ছিলেন এক নারী। তার থেকে দুই হাত দূরে এক নারীকে তল্লাশি করার সময় ওই নারী প্রতিবাদ করেন। ওই নারী ডাকাত দলকে বলেন, ‘তোরা যে কাজ করছিস, সেটা ঠিক নয়। আমার এলাকা পাবনায় হলে তোদের দেখে নিতাম।’ এ কথা শোনার পর দুই তরুণ ওই নারীকে মারধর করেন এবং পেছনের একটি সিটে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করেন।
এ বিষয়ে মধুপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মাজহারুল অমিন বলেন, ডাকাতদল যাত্রীদের মালামাল লুটের পর নারীযাত্রীকে ধর্ষণ করেছে। ভুক্তভোগীকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ ঘটনায় এক যাত্রী বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেছেন।