বাবার খোঁজ পেয়ে কষ্ট বেড়েছে দ্বিগুণ, বকুলের ছেলে

ভালোবাসার সম্পর্কে জড়িয়ে ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার শারীরিক প্রতিবন্ধী রওশন আরাকে ২০০৭ সালে বিয়ে করেন সোহেল মিয়া। সেই থেকে স্ত্রীকে পিঠে চড়িয়ে সংসারের কাজ, বিভিন্ন জায়গায় যাওয়া, ঘুরে বেড়ানো আর স্ত্রীর সব দায়িত্ব পালন করে চলেছেন সোহেল। ভালোবাসার অনন্য নিদর্শন সোহেল-রওশন দম্পতি। সম্প্রতি এমনই এক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয় গণমাধ্যমে। অল্প সময়ের মধ্যেই ভাইরাল হয় সোহেল ও রওশন আরার সেই সংসারের গল্প।

দেশজুড়ে তাদের ঘটনা ভাইরাল হতেই সেই সোহেল মিয়ার আসল পরিচয় বেরিয়ে আসে। রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলায় বাড়ি পরিচয় দেয়া সোহেল মিয়া প্রকৃতপক্ষে চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুরের বাঙ্গাবাড়ী ইউনিয়ের শ্যামপুর গ্রামের আব্দুল হান্নানের ছেলে মোখলেসুর রহমান। তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উচ্চশিক্ষিতও নন, তিনি অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশুনা করেছেন। এলাকায় তিনি বকুল নামে পরিচিত। পাওনাদারের হাত থেকে বাঁচতে চার সন্তান রেখে বাড়ি ছাড়েন বকুল। এখন গণমাধ্যমের কাছে প্রথম স্ত্রী ও সন্তানের কথা স্বীকারও করেছেন। তিনি বলেন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উচ্চশিক্ষার খবরও সত্য নয়। এসএসসি পরীক্ষাও দেয়া হয়নি তার।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বকুলের প্রথম স্ত্রীর নাম সুরাতন বেগম। তিনি গোমস্তাপুরের বাঙ্গাবাড়ী ইউনিয়নের সন্তোষপুর গ্রামে আব্দুল সাজ্জাদ আলীর মেয়ে। তাদের দাম্পত্য জীবনে তিন ছেলে আর এক মেয়ের জন্ম হয়। বকুলের প্রথম স্ত্রী সুরাতন বেগম বলেন, ‘বকুলের সঙ্গে ১৯৯২ সালে আমার বিয়ে হয়। ২০০৪ সালের শেষের দিকে ঢাকা যাওয়ার নাম করে বাড়ি থেকে বের হন বকুল। এখন পর্যন্ত আর বাড়ি ফেরেননি। পরিবারেরও খবর রাখেননি। আমরা সাধ্যমতো তাকে খোঁজাখুঁজি করেছি, কিন্তু সন্ধান পাইনি।

এদিকে বাবার খোঁজ পেয়ে বকুলের বড় ছেলে সিহাব উদ্দীন বলেন, ‘বাবা এতদিন ধরে নিখোঁজ ছিলেন অনেকটা মানিয়ে নিয়েছিলাম। কিন্তু বাবাকে ফেসবুক, টিভিতে দেখার পর কষ্ট বেড়ে দ্বিগুণ হয়ে গেছে। মনে হচ্ছে কাটা গায়ে নুন ছিটিয়ে আরও ক্ষত করে দেওয়ার মত অবস্থা। ’

তিনি জানান, ‘তার বাবা অষ্টম শ্রেনি পযন্ত পড়ালেখা করেছেন। কিন্তু তার বক্ত্যব্যে প্রচার হয়েছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েছেন, সেটিও মিথ্যা কথা। তার বিচার হওয়া উচিত।’ বকুলের ছেলে সোহাগ বলেন, ‘বাবা ফেলে রেখে যাওয়ার পর আমরা খুব কষ্টে বড় হয়েছি। চাচা ও ফুফুরা সব ধরনের সহাযোগিতা করেছেন। এখন হোটেল দিয়েছি। সেখান থেকে যা আয় হয়, তা দিয়ে সংসার চলে।’

বাবার কাছে বকুলের সন্তানদের এখন কোনো চাওয়া-পাওয়া নেই। তবে তাদের বর্তমানে একটাই চাওয়া, বকুল যে মিথ্যাবাদী এটা জানুক দেশবাসী।

Back to top button