জয়পুরহাটের একমাত্র ভাষাসৈনিক আজিজার রহমানের খোঁজ নেয় না কেউ
১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে জয়পুরহাটে যে কয়জন গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছিলেন, তাদেরই মধ্যে ভাষা সংগ্রামী ডা. আজিজার রহমান। ভাষা সংগ্রামের ৭০ বছর পার হলেও ভাষা সংগ্রামে যাওয়ার উদ্দেশ্য আজও পূরণ ও মূল্যায়ন হয়নি। ফেব্রুয়ারি মাস ছাড়া কেউ তার খোজ নেয় না। ভাষার জন্য তারা যে ত্যাগ শিকার করেছেন, সেই ভাষার বর্তমান হাল দেখেও বেশ হতাশ তিনি। বাংলার সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করতে সরকারি উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বানও জানান এই ভাষাসৈনিক।
জয়পুরহাট জেলায় যে কয়জন ভাষাসৈনিক ছিলেন তার মধ্যে বর্তমানে জীবিত আছেন আজিজার রহমান। বর্তমানে ৯৪ বছর বয়সে তিনি বার্ধক্যের কারণে ঠিকমতো কথা বলতে ও চলাফেরা করতে পারেন না। বর্তমানে নিজ বাসায় অসুস্থ হয়ে পড়ে আছেন। প্রতি বছর ফেব্রুয়ারি মাস এলে অনেকেই খোঁজ-খবর নিলেও বাকি সময় তিনি থাকেন নীরবে-নিভৃতে। শেষ বয়সে এসে তার পরিবার চান রাষ্ট্রীয়ভাবে তাকে স্বীকৃতি দেওয়া হোক।
মো. আজিজার রহমান ১৯২৮ সালের ৪ মার্চ নওগাঁ জেলার বদলগাছী উপজেলার ঝারঘড়িয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। বর্তমানে জয়পুরহাট জেলার ক্ষেতলাল উপজেলার মহব্বতপুর গ্রামে স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন। তিনি ১৯৪৮ সালে আক্কেলপুর হাইস্কুলে ভর্তি হন। সেখানে তিনি নবম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা করার সময় দেশের জন্য রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হন। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় ছাত্র হত্যার প্রতিবাদে ২২ ফেব্রুয়ারি দেশের অন্যান্য স্থানের মতো আক্কেলপুরে ছাত্রসভা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে অনেকের সঙ্গে তিনিও নেতৃত্ব দেন।
৬ দফা আন্দোলন, ১১ দফা আন্দোলন, অসহযোগ, ১৯৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান, ১৯৭০-এর নির্বাচন, এরপর তিনি ১৯৭১ সালে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুতি নেন। হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধের জন্য ভারতে যান তিনি। সেখানে আসাম রাজ্যের তেজপুর ক্যাম্পে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। পরবর্তীতে তিনি মুক্তিযুদ্ধেও একনিষ্ঠ সংগঠক হিসাবে কাজ করেন। ২০০০ সালের ৭ অক্টোবর প্রকাশিত মুক্তিবার্তায় তার নাম উল্লেখ আছে।
ব্যক্তিগত জীবনে ডা. আজিজার ছিলেন সৎ, নির্লোভ ও দেশপ্রেমিক ও ত্যাগী রাজনীতিবিদ। এ জন্য জীবনে দুইবার কারাবরণ করেন। তিনি আক্কেলপুর আদর্শ ক্লাব ও পাঠাগার প্রতিষ্ঠা করেন। ব্যক্তিগত জীবনে হোমিওপ্যাথি চিকিৎসক ছিলেন। তাই এলাকায় তাকে সবাই আজিজার ডাক্তার নামেই চিনেন। তিনি ২ ছেলে ও এক মেয়ের জনক।
ভাঙা ভাঙা কণ্ঠে ভাষাসৈনিক ডা. আজিজার রহমান বলেন, বাংলা ভাষা আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেলেও এর যথাযথ প্রয়োগ হচ্ছে না এখনও। অপসংস্কৃতির কবলে পড়ে হারিয়ে যেতে চলেছে বাংলা ভাষার গৌরব।
দেশ স্বাধীনতা লাভ করলেও তার মতে এখনও অর্থনৈতিক স্বাধীনতা লাভ করা সম্ভব হয়নি। স্বাধীনতা যুদ্ধের পর ভাষা সৈনিক হিসাবে স্থানীয় কিছু সম্মাননা মিললেও জাতীয়ভাবে কোনও স্বীকৃতি মেলেনি তার।
ভাষাসৈনিক ডা. আজিজার রহমানের ছেলে উজ্জ্বল হোসেন ও কন্যা রীতা আক্তার জানান, প্রতিবছর ফেব্রুয়ারি মাস আসলে অনেক সংগঠন ও সরকারের অনেক দপ্তর তার খোঁজ নিলেও অন্য সময়ে কেউ তার খোঁজ নেন না। তাদের দাবী,
তাদের বাবা যেন জীবদ্দশায় ভাষাসৈনিক হিসাবে স্বীকৃতি পান।
এ ব্যাপারে জয়পুরহাট জেলা প্রশাসক শরীফুল ইসলাম জানান, ব্যাপারটি আমি শুনলাম, খোঁজ-খবর নিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে ভাষাসৈনিক আজিজারের যথাযথ মর্যাদা দেওয়া হবে।