আধামণ আলুতে এক লিটার সয়াবিন তেল!

আলুচাষ করে ন্যায্য দাম না পেয়ে বিপাকে পড়েছেন গাইবান্ধার কৃষকরা। উৎপাদন খরচ উঠে আসাতো দূরের কথা, উল্টো বিঘাপ্রতি আট’ থেকে ১০ হাজার টাকা লোকসান গু’নতে হচ্ছে চাষিদের। আধামণ (২০ কেজি) আলু ‘বিক্রি করে কিনতে হচ্ছে এক লিটার সয়াবিন তেল। আর ১৫ কেজি আলু ‘বিক্রি করেও ২০০ গ্রাম নারিকেল তেল কেনা যাচ্ছে না।

জেলা কৃষি বিভাগ বলছে, আলুর ফলন বৃ’দ্ধি ও চাষাবাদ বেড়ে যাওয়ায় আলুর দাম কমেছে। আলু সংরক্ষণ করে রেখে বাজারজাত করতে পারলে কৃষকরা ন্যায্য দাম পাবেন বলে আশা করছেন তারা।

গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলার গাছাবাড়ী গ্রামের কৃষক ওমর’ আলী। এবার দুই বিঘা জমিতে দেশি জাতের আলুচাষ করেছেন তিনি। চাষে প্রতি বিঘায় প্রায় ১৫ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। স্বপ্ন ছিল আলু ‘বিক্রি করে জমিতে বোরো ধান রোপণ করবেন।

সেই স্বপ্ন বৃ’ষ্টিতে ভেসে যায়। চলতি মাসের শুরুর দিকে হঠাৎ বৃ’ষ্টিতে আলুক্ষেতে পানি জমে। এর পরে আলুতে পচন ধরে। বাজারেও কমে গেছে আলুর দাম।

আলুচাষি ওমর’ আলী বলেন, ‘প্রতি বিঘা আলুচাষে যে পরিমাণ উৎপাদন খরচ হয়েছে তার চেয়ে বেশি লোকসান গু’নতে হচ্ছে। কারণ এখন আলুর দাম নেই বললেই চলে। প্রতি মণ আলু পাইকারি ‘বিক্রি হয় ৩৫০ টাকা। পরিবহন খরচ ও আড়ত ফি বাদে ৩০০ টাকা থাকে।

২০ কেজি আলু ‘বিক্রি করেও (১৫০ টাকা) ১৭০ টাকায় এক লিটার সয়াবিন তেল কেনা যাচ্ছে না।’ প্রায় একই কথা বললেন সাঘাটার কচুয়া ইউনিয়নের মানিকগঞ্জ গ্রামের তরুণ আলুচাষি জুয়েল মিয়া। তিনি জাগো নিউজকে বলেন,

‘৪০ শতক জমিতে আলুচাষ করার পরে ফলন দেখে আশা ছিল অনেক লাভবান হবো। চলতি মাসের হঠাৎ বৃ’ষ্টিতে জমিতে পানি জমে আলুতে পচন ধরে। পরে সেচ দিয়ে পানি বের করে দেওয়া হয়। এখন ৩০০ টাকা মণ আলু ‘বিক্রি করতে হচ্ছে। তারপরও ক্রেতা নেই।’ ক্ষো’ভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘১৫ কেজি আলু ‘বিক্রি করে (১১২ টাকা) স্ত্রীর জন্য ২০০ গ্রাম নারিকেল তেল (১৩৫ টাকা) কেনা সম্ভব হয় না।

তাই সি’দ্ধান্ত নিয়েছি আগামী পাঁচ বছর আমি আর আলুচাষ করবো না।’ আলুচাষ করে বিপদে আছেন বলে জানালেন গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার হরিরামপুর ইউনিয়নের ময়েন উদ্দিন।

তিনি বলেন, ‘বাজারে এখন আলুর দাম-ই নেই। বৃ’ষ্টির কারণে আলু জমিতে বেশি দিন রাখা সম্ভব হয়নি। তাই অ’পরিপক্ক আলু তুলে ‘বিক্রি করে উৎপাদন খরচ তো দূরের কথা,

উল্টো প্রতি বিঘায় পাঁচ থেকে সাত হাজার টাকা লোকসান গু’নতে হচ্ছে।’ কৃষকরা যাতে আলুর ন্যায্য দাম পান সেজন্য সরকারের দৃ’ষ্টি আকর্ষণ করেন কৃষক শফিকুল ইসলাম।

তিনি বলেন, ঢাকা শহরে এখনো আলুর দাম বেশি। সরকারিভাবে আলু বাজারজাত করা গেলে কৃষকরা ন্যায্য দাম পাবেন। গাইবান্ধা জেলা কৃষি সম্প্রসারণের উপ-পরিচারক বেলাল হোসেন বলেন, এ বছর গাইবান্ধা জেলায় ৯ হাজার ২৫০ হেক্টার জমিতে আলুচাষ করা হয়েছে।

আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় আলুর ফলন বেশ ভালো হয়েছে। তবে আলুর দাম নিয়ে কৃষকরা ‘হতাশায় আছেন। আলু সংরক্ষণ করে রেখে বাজারজাত করতে পারলে কৃষকরা ন্যায্য দাম পাবেন।

Back to top button